আজাদীর কন্ঠ ডেস্ক:
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সম্প্রতি দেশের রাষ্ট্রীয় নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ বা বাংলা অনুবাদে ‘বাংলাদেশ জনকল্যাণ রাষ্ট্র’ করার প্রস্তাব দিয়েছে। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের নেতারা “আজাদীর কন্ঠ” কে বলেন যে, আমরা মনে করি বর্তমানে প্রচলিত ‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ শব্দটি একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শভিত্তিক ধারণা বহন করে, যা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমাদের মতে, ‘জনকল্যাণ রাষ্ট্র’ নামটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদর্শন ও জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে আরও ভালোভাবে প্রতিনিধিত্ব করে। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা যা জনকল্যাণ, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদাকে গুরুত্ব দেয়। তাই ‘জনকল্যাণ রাষ্ট্র’ নামটি দেশের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও নীতিমালাকে ইসলামি মূল্যবোধের ভিত্তিতে গড়ে তোলার ইঙ্গিত বহন করে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, এই নাম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনের পথ সুগম হবে, যেখানে ধর্ম, নৈতিকতা ও সামাজিক ন্যায়ের উপর ভিত্তি করে শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হবে। মোট ১৮২ টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৪৫ টি প্রস্তাবে একমত, ২৬টিতে দ্বিমত, ৪১ টি নতুন প্রস্তাব এবং মৌলিক প্রস্তাব ৪টি পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবী করে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি এবং ভবিষ্যত স্বৈরতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করার জন্য সহায়ক প্রস্তাবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একমত পোষণ করেছে এবং প্রয়োজনীয় নতুন প্রস্তাবনা যুক্ত করেছে। আজ ১০ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার দুপুর বারোটায় জাতীয় সংসদ ভবনে অবস্থিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের হাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সংস্কার প্রস্তাব তুলে দেয়া হয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্মমহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, মাওলানা ইমতেয়াজ আলম এবং সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম ও মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়ক কে এম শরিয়াতুল্লাহ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রস্তাবিত সংস্কারের অধিকাংশের সাথেই একমত পোষণ করেছে। বিশেষ করে সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া, একই ব্যক্তি দল, সরকার ও সংসদ প্রধান না থাকা, ৭০ অনুচ্ছেদের বিলুপ্তির মতো প্রস্তাব যা ভবিষ্যতে স্বৈরতন্ত্র মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে তাতে ঐকমত্য পোষণ করেছে।রাষ্ট্রের পূর্ণাঙ্গ নামের সংস্করণ পরিবর্তনের প্রস্তাবের সাথেও ইসলামী আন্দোলন একমত তবে রাষ্ট্রের নাম হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রস্তাব করেছে “পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অফ বাংলাদেশ”। কারণ এই নামের মধ্যেই জনকল্যাণ নিশ্চিত করার কথা বলা আছে। বিচার বিভাগীয় ২৩টি প্রস্তাবের মধ্যে ২১টির সাথেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে একমত পোষন করেছে। এর বাইরে শরীয়াহ কোর্ট স্থাপনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে এবং প্রমানিত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করার ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সম্মতিকে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।জনপ্রশাসন বিষয়ে প্রস্তাবিত মোট ২৬টি সংস্কারের মধ্যে ১২টি একমত পোষন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ৯টি প্রস্তাবের সাথে দ্বিমত পোষণ করা হয়েছে। আর ০৫টির সাথে আংশিক একমত পোষণ করা হয়েছে। এরমধ্যে বিশেষ করে প্রদেশিক ও সিটি গভর্নমেন্ট প্রস্তাবের সাথে এবং মেম্বারদের ভোটে চেয়ারম্যান নিয়োগের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করা হয়েছে। এবং অফিসিয়াল সিক্রেট এক্ট সংশোধনের বদলে পুরো বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়োগে মন্ত্রীপরিষদ কমিটিরও বিরোধিতা করা হয়েছে।সংবিধান সংস্কার কমিশনের ৭০ টি প্রস্তাবের মধ্যে ৬১ টি প্রস্তাবে একমত, ০৩টি একমত পোষন করা হয় নাই। ৬ টিতে আংশিক একমত পোষণ করা হয়েছে। নতুন প্রস্তাব এবং মন্তব্য যুক্ত করা হয়েছে ১১ টি ও মৌলিক প্রস্তাব ৪টি। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ২৩ টি প্রস্তাবের মধ্যে ২১ টি প্রস্তাবে একমত, ০২ টিতে দ্বিমত পোষন করা হয়েছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ২৬ টি প্রস্তাবের মধ্যে ১২ টি প্রস্তাবে একমত, ০৯ টি একমত পোষন করা হয় নাই। একটি বিশেষ মুল্যায়নসহ ১৩ টি নতুন প্রস্তাবনা যুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের ২৭ টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৮ টি প্রস্তাবে একমত, ০৯টি একমত পোষন করা হয় নাই। নতুন প্রস্তাবনা যুক্ত করা হয়েছে একটি। দুদক সংস্কার কমিশনের ২১ টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৮ টি প্রস্তাবে একমত, ০৩টি একমত পোষন করা হয় নাই। নতুন প্রস্তাবনা ৫ টি ও সুপারিশ যুক্ত করা হয়েছে তিনটি। পুলিশ সংস্কার কমিশনের ১৫ টি প্রস্তাবের সবগুলোতেই একমত পোষণ করা হয়েছে।